দেশে আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চাঁদপুর জেলা শাখা।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন এর মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন ক্যাব চাঁদপুরের কর্মকর্তাবৃন্দ। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বিষয়: দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও অতি মুনাফা লোভীদের কারণে আলু ও পেঁয়াজ সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের বাইরে এবং আইনে নিষিদ্ধ থাকা ভোজ্য তেল (ড্রামে) বিক্রি বন্ধ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে ক্যাবের মানববন্ধন, র্যালি ও স্মারকলিপি প্রদান।
আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বিশেষত আলু, পেঁয়াজ এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস অবস্থা। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে যে, বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু মান ভেদে এখনো ৭৫-৮০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১৫-১৩০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৫-১৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নভেম্বর মাসে এমন চড়া দামে আলু বিক্রি হতে দেখা যায়নি। মূলত সিন্ডিকেটের কারণেই এবার আলুর দামের এমন অবস্থা। বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগারে মজুদ থাকায় ও আমদানি জটিলতার কারণে এবার আলুর দাম ভোগাচ্ছে ক্রেতাদের। অবশ্য দাম নিয়ন্ত্রণে বা আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক করতে নেই যথাযথ তদারকি। আলুর মতো নিয়ন্ত্রণে আসেনি পেঁয়াজের দাম। দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি থাকা পেঁয়াজের দামও এখনও কেজি প্রতি ৭০-৮০ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মজুদকারীরা কোনো কারণ ছাড়াই আলুর দাম বৃদ্ধি করেছেন। চলতি বছর আলু উত্তোলন মৌসুমের শুরুতে কৃষকের হাত থেকে পাইকারি দামে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২৫-২৮ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হতো ৩০-৩৫ টাকা। সেই আলুর দাম বাড়তে বাড়তে এখন প্রতি কেজি ৮০ টাকায় পৌঁছেছে। কৃষক পর্যায় থেকে নামমাত্র মূল্যে আলু কিনে মজুদ করে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন থেকে এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব ঘটনা বারবার ঘটছে। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও বেশি সজাগ ও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে।
জেলার হিমাগারগুলো ও হাতে গোনা বড় ব্যবসায়ীদের হাতেই এখনো আলু মজুদ রয়েছে। আর এই সিন্ডিকেটেই আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও চড়া দামেই ভোক্তাদের আলু কিনতে হচ্ছে। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম এখনো বেশি। এ কারণে খুচরা বাজারেও পণ্যটির দাম কমেনি। হিমাগার পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর তদারকি না থাকায় আলুর দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এতে পণ্যটির দাম কমেছে। তবে কমেছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও পড়তির দিকে।
আপনারা জানেন কর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সরকার একটি লোভ ও মোহহীন কল্যাণকামী সরকার। স্বৈরাচারী সরকারের দোসররা এই সরকারকে ব্যর্থ করার গভীর ষড়যন্ত্রে ব্যন্ত। তাই তারা দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির কারসাজিতে ব্যস্ত।
ভোক্তা স্বার্থে ক্যাব এর তীব্র প্রতিবাদে ক্যাবের ৮ দফা দাবী: ১. অসাধু দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
২. নিত্য পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. বাজার অভিযান/ মনিটরিং বৃদ্ধি করতে হবে।
৪. টিসিবির ট্রাক সেল বাড়াতে হবে।
৫. ভোজ্য তেল খোলা বাজারে বিক্রিতাদের কঠোর ভাবে আইনের আওতায় আনতে হবে।
৬. ভোক্তা স্বার্থ দেখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা বিভাগ বা কনজুমারস মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।
৭. সরকার ১ কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপণ্য দিচ্ছে এর সংখ্যা ১,৫০,০০০০ (দেড় কোটি) করতে হবে।
৮. আইনে নিষিদ্ধ থাকা বাজারে খোলা ভোজ্য তেল (ড্রামে) বিক্রেতাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শান্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
জনকল্যাণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে উল্লেখিত দাবীসমূহ বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নেবার জন্য ভোক্তাদের পক্ষ থেকে আবেদনটি করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ক্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ বিপ্লব সরকার, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. কাজী হাসেম, জেলা ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সানাউল্লাহ খান, জেলা ক্যাব সদস্য আবুল বাশার মজুমদার প্রমূখ।